বাসার সানশেড ভেঙে পড়ে বাবা-ছেলের মৃত্যু
ছুটির দিন সকালে তিন সন্তানের সঙ্গে বাসাতেই ছিলেন দেলোয়ার হোসেন উজ্জ্বল (৩৮)। হঠাৎ ভূমিকম্পে সব কেঁপে ওঠে। আতঙ্কিত হয়ে নিরাপদ স্থানে যেতে সন্তানদের হাত ধরে দ্রুত বের হওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু তার আগেই বাসার সানশেড ভেঙে তাদের মাথায় পড়ে। এতে প্রাণ হারান উজ্জ্বল ও তার ছোট ছেলে ওমর আলী (১০)। গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি দুই মেয়ে।
শুক্রবার নরসিংদী সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের গাবতলি এলাকায় মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে। উজ্জ্বলের বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তরপাড়া গ্রামে। তিনি নরসিংদীতে জুট করপোরেশনে চাকরি করেন। সেই সুবাদে গাবতলি এলাকায় ভাড়া বাসার নিচতলায় পরিবার নিয়ে থাকতেন। উজ্জ্বলের ছেলে ওমর স্থানীয় মাদ্রাসায় পড়ত। মেয়ে উষা (১৭) ও তবুফা (১৪) নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। উষা এবার এসএসসি পাস করেছে। তবুফা নবম শ্রেণিতে পড়ে। ঘটনার সময় উজ্জ্বলের স্ত্রী গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। স্বামী ও ছেলেকে হারিয়ে তিনি পাগলপ্রায়।
আরও পড়ুনঃ উড্ডয়নের সময় পড়ে গেল চাকা, ৭১ যাত্রী নিয়ে মাঝ আকাশে বিমান
স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার সকালে ভূমিকম্পের সময় সন্তানদের নিয়ে বাসা থেকে বের হচ্ছিলেন উজ্জ্বল। ঠিক এই সময় পাশের নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল থেকে ইট ধসে তাদের বসতবাড়ির ছাদের ওপর আছড়ে পড়ে। এতে বাসার সানশেড ভেঙে উজ্জ্বল, তার ছেলে ও দুই মেয়ে আহত হয়। স্থানীয়রা প্রথমে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাবা ও ছেলেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। দুপুরে সেখানে নেওয়ার পর ওমরকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। উজ্জ্বলকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আইসিইউর লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি মারা যান।
আরও পড়ুনঃ সকালে খালি পেটে এক মুঠো কাঁচা ছোলা কী কী উপকার করে
উজ্জ্বলের চাচাতো ভাই জাকির হোসেন ও প্রতিবেশী তারিকুল ইসলাম শাহীন বলেন, উজ্জ্বল প্রায় ১০ বছর ধরে নরসিংদীতে চাকরি করছিলেন। স্ত্রী-সন্তান থাকত গ্রামের বাড়িতে। বছর চারেক আগে তাদের নরসিংদীতে নিয়ে আসেন। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ভালোই ছিলেন উজ্জ্বল। শুক্রবার সকালে ভূমিকম্পের সময় তিনি এক ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে বের হয়ে নিরাপদ স্থানে যাচ্ছিলেন। এ সময় বাসার সানশেড ভেঙে তাদের ওপর পড়ে। বাবা-ছেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। উজ্জ্বলের দুই মেয়ে নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তারা আরও বলেন, দুই মেয়েকে বাবা ও ভাইয়ের মৃত্যুর খবর জানানো হয়নি। তাদের মা কাঁদতে কাঁদতে মূর্ছা যাচ্ছেন। তাকে সারাজীবন এই ভয়াবহ শোকের বোঝা বয়ে বেড়াতে হবে।

Comments
Post a Comment