ভূমিকম্প নিয়ে হজরত ওমরের যে বক্তব্য দুনিয়া কাঁপিয়ে দেয়



ভূমিকম্প নিয়ে হজরত ওমরের যে বক্তব্য দুনিয়া কাঁপিয়ে দদেয় 


মহাবীর, ন্যায়নিষ্ঠ ও আল্লাহভীরু খলিফা হজরত ওমর (রা.) ছিলেন এমন শাসক—যার ভয়ে জমিন কাঁপত, আর যার ইমানের দৃঢ়তায় আসমান গর্ব করত। একবার তার শাসনামলে মদিনা ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে। লোকজন ভীত হয়ে পড়ে। তখন হজরত ওমর এমন একটি ঘোষণা দেন—যা শুধু সেই যুগকেই নাড়িয়ে দেয়নি, বরং পরবর্তী প্রতিটি যুগের মুমিনের হৃদয়কে জাগিয়ে দেয়।


ইমাম ইবনে আবি শাইবা (রহ.) তার ‘মুসান্নাফ’-এ হজরত ওমর (রা.)-এর হাদিসটি বর্ণনা করেন—


عَنْ صَفْوَانَ بْنِ عُمَرَ عَنْ شُرَحْبِيلَ بْنِ السِّمْطِ قَالَ: زُلْزِلَتِ الْأَرْضُ عَلَى عَهْدِ عُمَرَ، فَخَطَبَ النَّاسَ فَقَالَ: يَا أَهْلَ الْمَدِينَةِ، مَا أَسْرَعَ مَا أَحْدَثْتُمْ! لَئِنْ عَادَتْ لَأُخْرِجَنَّ مِنْ بَيْنِ ظَهْرَانِيك

হজরত সাফওয়ান ইবন উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, শুরাহবিল ইবনিস সিমত বলেছেন— হজরত ওমরের শাসনামলে ভূমিকম্প ঘটে। তখন তিনি (ওমর) লোকদের উদ্দেশে খুতবা দিলেন এবং বললেন, ‘হে মদিনার লোক! তোমরা কত দ্রুত (গুনাহ ও পরিবর্তন) সৃষ্টি করলে! আল্লাহর কসম! যদি ভূমিকম্প আবার ফিরে আসে—আমি তোমাদের মধ্য থেকে বের হয়ে যাব।’ (মুসান্নাফে ইবনে আইবি শাইবা ৩১২১৯)


ইমাম বায়হাকি (রহ.)-এর রেওয়ায়েতে এসেছে, যেখানে হজরত ওমর মানুষকে বলেন—


إِنَّمَا زُلْزِلْتِ الْأَرْضُ لِمَا أَحْدَثَ النَّاسُ مِنَ الذُّنُوبِ.


‘মানুষ যে গুনাহ সৃষ্টি করেছে— তার কারণে ভূমিকম্প এসেছে।’ (শু‘আবুল ইমান, বায়হাকি ৮/৩৬৪)


হজরত ওমর বিন্দুমাত্র বিলম্ব করেননি। ভূমিকম্পকে তিনি শুধু একটি প্রাকৃতিক ঘটনা হিসেবে দেখেননি। বরং এটি ছিল আল্লাহর সাইগা (সতর্কবার্তা)। তিনি বলেন—


১. ‘তোমরা কত দ্রুত বদলে গেছো!’


এই শব্দগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, মদিনার মানুষ হয়তো এমন কিছু পরিবর্তন এনেছিল তাদের আচার, গুনাহ বা আল্লাহর প্রতি অবহেলায়, যা ওমরের চোখে ধরা পড়ে।


২. হজরত ওমর জনগণকে সরাসরি আত্মসমালোচনায় ডাকলেন এবং তিনি বললেন— ভূমিকম্প মানে আল্লাহ অসন্তুষ্ট। এ সংকেত বুঝতে হবে, কেবল ভয় পাওয়াই যথেষ্ট নয়।


আরও পড়ুনঃ রমজানে ছুটি পাবে না বাহরাইনের শিক্ষার্থীরা

৩. ‘যদি (ভূমিকম্প) আবার আসে, (তাহলে) আমি মদিনা ছেড়ে চলে যাব।’


এ কথায় দুইটি বিষয় প্রকাশ পায়—


> আল্লাহর শাস্তির ভয়


হজরত ওমর জানতেন, আল্লাহ শাস্তি দিলে তা সাধারণত তাওবা-বিহীন জনগোষ্ঠীর ওপর আসে।


> শাসকের দায়িত্ব পালন— ধর্মীয় নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা


তিনি বোঝাতে চাইলেন যে, গুনাহ চলমান থাকলে আল্লাহর রহমত নেমে আসে না। একটি জাতির কাজ–কর্মের প্রভাব পুরো সমাজে পড়ে।


কুরআন ও হাদিসে হজরত ওমরের বাণীর ভিত্তি


হজরত ওমরের কথার সঙ্গে কুরআন–হাদিসের শক্ত প্রমাণ রয়েছে। কুরআনের প্রমাণ হলো—


১. পৃথিবীতে বিপর্যয় গুনাহের ফল


وَمَا أَصَابَكُم مِّن مُّصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ


‘তোমাদের ওপর যে বিপদ আসে—তা তোমাদেরই হাতের কামাই।’ (সুরা আশ-শূরা: আয়াত ৩০)


২. আল্লাহ সতর্কবার্তা পাঠান


হজরত ওমর ভূমিকম্পকে এই ভয়–সতর্কতার আলোতেই দেখেছিলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন—


وَمَا نُرْسِلُ بِالْآيَاتِ إِلَّا تَخْوِيفًا


‘আমি নিদর্শন (প্রাকৃতিক ঘটনা) পাঠাই ভীতি প্রদর্শনের জন্য।’ (সুরা আল-ইসরা: আয়াত ৫৯)


৩. পাপাচার বাড়লে বিপর্যয় আসে


পাপ–অন্যায়ের কারণে বিপদ আসে—এটাই ইসলামের স্পষ্ট শিক্ষা। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিসে এমনটির সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলেন—


يَا مَعْشَرَ الْمُهَاجِرِينَ خَمْسٌ إِذَا ابْتُلِيتُمْ بِهِنَّ وَأَعُوذُ بِاللَّهِ أَنْ تُدْرِكُوهُنَّ لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ قَطُّ حَتَّى يُعْلِنُوا بِهَا إِلاَّ فَشَا فِيهِمُ الطَّاعُونُ وَالأَوْجَاعُ الَّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلاَفِهِمُ الَّذِينَ مَضَوْا ‏.‏ وَلَمْ يَنْقُصُوا الْمِكْيَالَ وَالْمِيزَانَ إِلاَّ أُخِذُوا بِالسِّنِينَ وَشِدَّةِ الْمَؤُنَةِ وَجَوْرِ السُّلْطَانِ عَلَيْهِمْ ‏.‏ وَلَمْ يَمْنَعُوا زَكَاةَ أَمْوَالِهِمْ إِلاَّ مُنِعُوا الْقَطْرَ مِنَ السَّمَاءِ وَلَوْلاَ الْبَهَائِمُ لَمْ يُمْطَرُوا وَلَمْ يَنْقُضُوا عَهْدَ اللَّهِ وَعَهْدَ رَسُولِهِ إِلاَّ سَلَّطَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ عَدُوًّا مِنْ غَيْرِهِمْ فَأَخَذُوا بَعْضَ مَا فِي أَيْدِيهِمْ ‏.‏ وَمَا لَمْ تَحْكُمْ أَئِمَّتُهُمْ بِكِتَابِ اللَّهِ وَيَتَخَيَّرُوا مِمَّا أَنْزَلَ اللَّهُ إِلاَّ جَعَلَ اللَّهُ بَأْسَهُمْ بَيْنَهُمْ


আরও পড়ুনঃ রমজানের ১০ পণ্য আমদানিতে বিশেষ সুবিধা

‘হে মুহাজিরগণ! তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেন তোমরা তার সম্মুখীন না হও। যখন কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারি আকারে প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকেদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি। যখন কোনো জাতি ওযন ও পরিমাপে কারচুপি করে তখন তাদের ওপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ নেমে আসে, শাসকের তরফ থেকে অত্যাচার কঠিন বিপদ-মুসিবত নেমে আসে এবং যখন যাকাত আদায় না করে, তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদি ভূ-পৃষ্ঠে চতুস্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকতো তাহলে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না। যখন কোন জাতি আল্লাহ ও তার রাসুলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের ওপর তাদের বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাশীন করেন এবং সে তাদের সহায়-সম্পদ কেড়ে নেয়। যখন তোমাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা করে না এবং আল্লাহর নাজিলকৃত বিধানকে গ্রহণ করে না, তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেন। (ইবনে মাজাহ ৪০১৯)


৪. কেয়ামতের আগে ভূমিকম্প বাড়বে


হজরত ওমর ভূমিকম্প সংশ্লিষ্ট হাদিসগুলো জানতেন যে, পাপকর্ম বেড়ে গেলে ভূমিকম্প হবে এবং এ জন্যই ঘটনাকে ইসলামের আলোকে ব্যাখ্যা করেছিলেন। অন্য এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—


لاَ تَ

Countdown Timer

Comments

Popular posts from this blog

ফের ভূমিকম্প।

হাসপাতালে জামা খুলে হবু স্ত্রীর সঙ্গে চিকিৎসকের নাচ, ভিডিও ভাইরাল।

শনিবার ৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়